আবৃতবীজী উদ্ভিদ Abritobiji Udvid - Notes
আবৃতবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে?
যে সকল উদ্ভিদের বীজ ফলের অভ্যন্তরে আবৃত অবস্থায় থাকে সে সকল উদ্ভিদকে Angiosperm বা আবৃতবীজী উদ্ভিদ বলে। আবৃতবীজী উদ্ভিদ আবার গুপ্তবীজী উদ্ভিদ নামেও পরিচিত।
আবৃতবীজী উদ্ভিদ : Angiosperms - উদ্ভিদ ও পৃথিবী |
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য
❐ এসকল উদ্ভিদের গর্ভাশয় নিষেকের পরে ফলে পরিণত হয়।
❐ যেহেতু ফল উৎপন্ন হয় তাই বীজ ফলের ভিতরে আবৃত থাকে।
❐ এদের আর্কিগোনিয়া সৃষ্টি হয় না।
❐ পরাগায়নকালে পরাগরেনু গর্ভমুন্ডে পতিত হয়।
❐ এদের সাধারণত দ্বি-নিষেক ঘটতে দেখা যায়।
❐ এদের শস্য বা এন্ডোস্পার্ম ট্রিপ্লয়েড (3n)।
❐ এসকল উদ্ভিদের জাইলেম টিস্যুতে সুগঠিত ভেসেল কোষ ও ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রকার
আবৃতবীজী উদ্ভিদ ২ ভাগে বিভক্ত -
(১) একবীজপত্রী উদ্ভিদ(২) দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ
একবীজপত্রী উদ্ভিদ এবং দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদকে অনেকগুলো গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে। এসকল গোত্রের সবগুলো বৈশিষ্ট্য একসাথে মনে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বৈশিষ্ট্যগুলো মনে রাখার সুবিধার্থে নিচের উল্লিখিত বিষয়ে ভালো ধারনা থাকতে হবে...
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের স্বভাব বা স্বরূপ
◇ বীরুৎ
যে সকল উদ্ভিদের কান্ড নরম ও ছোট তারাই বিরুৎ উদ্ভিদ।
যেমন- দুর্বাঘাস, ধান, গম ইত্যাদি।
◇ উপগুল্ম
যে সকল উদ্ভিদ গুল্মের থেকেও ছোট আকৃতির হয় তাদেরকে উপগুল্ম বলে।
যেমন- দাতঁমর্দন, কালকাসুন্দা ইত্যাদি।
◇ গুল্ম
ঝোপজাতীয় এবং গুঁড়িবিহীন মাঝারি আকারের উদ্ভিদকে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ বলে।
যেমন- বাসক, রঙ্গন, গোলাপ, জবা ইত্যাদি।
◇ পরাশ্রয়ী
অন্য উদ্ভিদকে আশ্রয় করে শুধু জন্ম নেয় তবে ঐ উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি করে না এবং নিজের খাদ্য নিজে তৈরী করে তারাই পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ।
যেমন- রোহিণী উদ্ভিদ।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের মূল
◇ প্রধান মূল
প্রাথমিক মূল হিসেবে যে মূল ভ্রুণমূল হতে সৃষ্টি হয় এবং এটি বৃদ্ধি পেয়ে মূলতন্ত্র গঠন করে, তাকে প্রধান মূল বলে।
যেমনঃ গাজর, মূলা, বীট ইত্যাদি।
◇ অস্থানিক মূল
যে মূল ভ্রুণমূল হতে সৃষ্টি হয় না বরং ঐ উদ্ভিদের অন্য কোনো অঙ্গ থেকে উদ্ভূত হয়, তাকে অস্থানিক মূল বলে।
যেমনঃ বট, কেয়া ইত্যাদি।
◇ পরাশ্রয়ী মূল
যে সকল মূল পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ এর পর্ব থেকে সৃষ্টি হয় এবং এই মূল অস্থানিক মূল হিসেবে উদ্ভুত হয় তাকে পরাশ্রয়ী মূল বলে।
যেমনঃ অর্কিড।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের কান্ড
◇ সরল কান্ডঃ আম
◇ দূর্বল কান্ডঃ দুর্বাঘাস, লাউ ইত্যাদি।
◇ ফাঁপা কান্ডঃ Poacea, Cyperaceae
◇ টিউবারঃ আলু
◇ রাইজোমঃ হলুদ, আদা
◇ রানারঃ থানকুনি
◇ বাল্বঃ রসুন, পেঁয়াজ
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের পাতা
◇ একান্তর পাতাঃ জবা, ধুতুরা
◇ প্রতিমুখ পাতাঃ পেয়ারা, আকন্দ, তুলসী
◇ আবর্ত পাতাঃ ছাতিম, করবী
◇ মঞ্জরী পত্রঃ সূর্যমুখী, কলা
◇ জালিকা শিরাবিন্যাসঃ আম, জাম, কুমড়া
◇ সমান্তরাল শিরাবিন্যাসঃ ধান, আখ, গম
◇ সরল পাতাঃ আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জবা
◇ যৌগিক পাতাঃ তেতুল, বাবলা, কৃষ্ণচূড়া, সজিনা, লজ্জাবতি, গোলাপ, কামিনী, নিম
◇ অচূড়পক্ষল যৌগিক পত্রঃ বাঁদর লাঠি
◇ সচূড়পক্ষল যৌগিক পত্রঃ গোলাপ
◇ দ্বিপক্ষল যৌগিক পত্রঃ কৃষ্ণচূড়া
◇ ত্রিপক্ষল যৌগিক পত্রঃ সজিনা
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের পুষ্পবিন্যাস বা পুষ্পমঞ্জরি
কান্ডের কাক্ষিক মুকুল বা শীর্ষ মুকুল হতে সৃষ্ট যে শাখা বা শাখাতন্ত্রের উপর পুষ্পের বিন্যাস পদ্ধতিকে পুষ্পবিন্যাস বা পুষ্পমঞ্জরি বলে।
এটি ২ প্রকারঃ
(১) অনিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা রেসিম(২) নিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা সাইমোস
(১) অনিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা রেসিমঃ
অনিয়তভাবে যে সকল উদ্ভিদের পুষ্পমঞ্জরি বাড়তে থাকে তাকে অনিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা রেসিম বলে।
যেমনঃ রজনীগন্ধা
এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে-
স্পাইকঃ রজনীগন্ধা
স্পাইকলেটঃ ঘাস, ধান, গম
শিরমঞ্জরী বা ক্যাপিচুলামঃ সূর্যমুখী
(২) নিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা সাইমোসঃ
যে সকল উদ্ভিদের পুষ্পমঞ্জরি নিয়ত ভাবে বর্ধিত হয় তাকে নিয়ত পুষ্পবিন্যাস বা সাইমোস বলে।
যেমনঃ জবা ফুলের পুষ্পমঞ্জরি।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের ফুল
পূর্ণতা অনুসারে,
অসম্পূর্ণ ফুল = লাউ, কুমড়া
সম্পূর্ণ ফুল = জবা, ধুতুরা
লিঙ্গ অনুসারে,
একলিঙ্গ ফুল = লাউ, কুমড়া
উভলিঙ্গ ফুল = জবা, ধুতুরা
অঙ্গের সমতা অনুসারে,
সমাঙ্গ ফুল = জবা
অসমাঙ্গ ফুল = অপরাজিতা
প্রতিসমতার ভিত্তিতে,
একপ্রতিসম ফুল = শিম
বহুপ্রতিসম ফুল = জবা, ধুতুরা
অপ্রতিসম ফুল = কলাবতী, অর্কিড
গর্ভাশয়ের অবস্থান অনুযায়ী,
Hypogynous বা গর্ভপাদ পুষ্প = সরিষা, ধুতুরা, ধানের ফুল, জবা
Perigynous বা গর্ভকটি পুষ্প = মটর, গোলাপ ফুল, শিম
Epigynous বা গর্ভশীর্ষ পুষ্প = পেয়ারা ফুল, কুমড়া
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের ফল
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের পুষ্পবিন্যাস বা পুষ্পমঞ্জরি
পুষ্পপত্রবিন্যাস বা এস্টিভেশনঃ
কোনো উদ্ভিদের মুকুলাবস্থায় ফুলের বৃত্যংশ বা পাপড়িগুলো পরস্পর যেভাবে বিন্যস্ত থাকবে, তাকে পুষ্পপত্রবিন্যাস বা এস্টিভেশন বলে।
এটি কয়েক ভাবে থাকতে পারেঃ
মুক্ত বা ওপেন = গন্ধরাজ।
পাকানো বা টুইস্টেড = জবার দলমন্ডলের পুষ্পপত্রবিন্যাস।
প্রান্তস্পর্শী বা ভালভেট = বাবলা, আকন্দ, জবার বৃতির পুষ্পপত্রবিন্যাস।
ইমব্রিকেট = বাঁদরলাঠি, কালকাসুন্দা, কৃষ্ণচূড়া
কুইনকানসিয়াল = সরিষা, পেয়ারা।
ভেক্সিলারি = শিম, মটরশুঁটি।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্লাসেন্টেশন বা অমরাবিন্যাস
ফুলের গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে যে টিস্যু হতে ডিম্বক বা ওভিউল সৃষ্টি হয়, সেই টিস্যুকে বলা হয় অমরা বা প্লাসেন্টা। আর গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে অমরার বিন্যাস পদ্ধতিকে অমরাবিন্যাস বা প্লাসেন্টেশন বলে।
এটি বিভিন্ন রকমের হতে পারেঃ
Marginal বা একপ্রান্তীয় = শিম, মটরশুঁটি।
Free central বা মুক্তমধ্য = বন ধনিয়া, নুনিয়া শাক, তুঁত।
Axile বা অক্ষীয় = বেগুণ, জবা।
Paraietal বা বহুপ্রান্তীয় = পেঁপে, লাউ, কুমড়া, শশা, সরিষা।
Superficial বা গাত্রীয় = পদ্ম, শালুক, শাপলা।
Basal বা মূলীয় = সূর্যমুখী, ত্রিধারা, গাঁদা, ধান।
Apical বা শীর্ষক = লাল পাতা, লাউ পাতা, ধনিয়া।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
◇ পুংস্তবকের প্রতিটি সদস্যকে → স্টেমিন বা পুংকেশর বলে।
◇ স্ত্রী স্তবকের প্রতিটি সদস্যকে → কার্পেল / গর্ভযন্ত্র / স্ত্রীকেশর বলে।
◇ স্ত্রী স্তবকের মাঝের সরু অংশকে → Style বা গর্ভদন্ড বলে।
◇ স্ত্রী স্তবকের মাথা → Stigma বা গর্ভমুন্ড।
◇ Corolla বা দলমন্ডল এর প্রতিটি সদস্যকে → Petal বা পাপড়ি বলে।
◇ পুষ্পপুটের প্রতিটি সদস্যকে → Tepal বা টেপাল বলে।
◇ Calyx বা বৃতির প্রতিটি সদস্যকে → Sepal বা বৃত্যংশ বলে।
✔ আবৃতবীজী উদ্ভিদের পুষ্প সংকেত
পুষ্পের বিভিন্ন অংশের অর্থাৎ পুষ্পের লিঙ্গ, স্তবক ও স্তবকের সদস্যসংখ্যা এবং এর অবস্থান, মঞ্জরীপত্র, উপমঞ্জরীপত্রের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি ইত্যাদি তথ্য যে সংকেতের দ্বারা প্রকাশ করা হয়, তাকে floral formula বা পুষ্পসংকেত বলে।
✔ পুষ্প সংকেত ব্যবহৃত বর্ণমালা
◇ পুষ্প সংকেত লিখার পদ্ধতিঃ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন