আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স - Notes
এআই, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টা একবার ভাবলেই, কল্পনায় চলে আসে, রোবোটিক্স টাইপের কিছু। যারা সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করেন, তারা ত গড় গড় করে বলে দিবে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন, ট্রান্সফরমারস, টার্মিনেটর, ম্যাট্রিক্স, আই রোবটের মত অসংখ্য চলচিত্র বা সাহিত্যের নাম। যদি সাহিত্যের কথাই ধরা হয়, তাহলে বলা যায়, উনিশ শতক থেকে লেখকদের মাঝে একটা ট্রেন্ডিং চালু হয়ে গিয়েছিল, সাহিত্যের মাঝে কল্পবিজ্ঞান, বা সায়েন্স ফিকশন মেশানোর। তখনকার দিনে এত্ত এত্ত মুভিও ছিলনা বা সাহিত্যও না, তবে মানুষের কল্পনাশক্তি আর মনোবল ছিল প্রখর। যদিও বহুকাল আগে, প্রায় ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, কথার পিঠে কথা বা যুক্তি প্রদর্শনের জন্য একটি মেশিন তৈরি করা হয়েছিল। এরপর শত শত বছর, মানুষের ধারনা, চিন্তা শক্তি, আর বুদ্ধিমত্তার বিকাশের সাথে সাথে আজ আমাদের এই নতুন পৃথিবীতে সেসব কল্পনাগুলোকে বাস্তবে, ছুয়ে দেখতে পারছি।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা - তথ্য প্রযুক্তি |
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
যেহেতু এই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শাখাটি কম্পিউটার সায়েন্সের একটি অংশ। তাই কম্পিউটার সায়েন্টিস্টদের মতে, এ আই হলো, প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি মেশিন বা যন্ত্র, যাকে এমন ভাবে প্রোগ্রাম করা হয়, যেন মেশিনটি স্বাভাবিক মানুষের অনুরূপ বা কাছাকাছি, নতুন কিছু শিখতে ও মনে রাখতে পারে, চিন্তা করতে পারে, শুধু তাই নয়, সেই চিন্তাশক্তিকে, বাস্তবায়ন করার প্রয়াস করতে পারে, এমনকি কথার পিঠে কথা বলাও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
✯ এখানে মূলত মাত্র দুটি ব্যাপার ঘটেঃ
১। শেখা২। সমস্যা সমাধান করা
আচ্ছা বুঝলাম, এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, এই এআই বা বানানোর দরকার কি? মানে উদ্দেশ্য কি?
✔ সিম্পল, মানুষ বসে বসে হুকুম করবে, মেশিন তা পালন করবে। হাহাহা।
আসলে অনেকটা এমনই, ধরে নিলাম আপনি এই লেখাটি পড়ছেন আপনার স্মার্ট ফোনে, আর আপনি বসে আছেন একটি আলোকিত ঘরে, যেখানে একটি সাদা চমৎকার লাইট জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। এখন, হঠাৎ আপনার মনে হলো, লাইট টা দরকার নেই, বা আপনি চাচ্ছেন আলোটা একটু কমিয়ে দিলে ভালো হতো।
আপনি চাইলে কিন্তু সুইচ টিপে অফ করতে পারেন, অথবা যদি এমন হয়, আপনি লাইটকে বললেন, লাইট বাবু একটু আলো কমিয়ে দাওতো। সঙ্গে সঙ্গে লাইটের আলো কমে গেলো। আবার বললেন আরে বেটা লাইট, এখন ঘুমামু, অফ যা। লাইট আপনার কথা শুনে শুভ রাত্রি বলে, সে ও ঘুমাতে গেলো।
কি? কেমন হয় ব্যাপারটা?
আসলে এই প্রযুক্তি টি ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা বানিয়ে ফেলেছেন, আর সেটা সবাই ইউজও করছে, যেমন, গুগল হোম, বা এপলের শিরি এসব করে দেখিয়েছে। শুধু তাই না, সময়, খবর, আবহাওয়া, বিনোদন থেকে শুরু করে, ২৪ঘন্টা আমাদের সঙ্গী হয়ে আছে এসব প্রযুক্তি। এগুলো আর কিছুইনা, এ আই, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই উদাহরন।
২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে?
একটু সহজ ভাষায় বললে, এটি যেহেতু মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনুরূপ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে একটি, মেমরি সেল আছে, যেখানে সব রকম তথ্য জমা থাকবে। আর হতে পারে একই জিনিস বা সমস্যা বা ঘটনা বার বার যেমন মানুষের সাথে ঘটতে পারে, তেমনি এই এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মেশিনের সাথেও ঘটতে পারে। তাই বার বার এত তথ্য, ছবি, মেমরি, এর মেমরি সেলে সেভ করে রাখা, আবার সেই হিউজ বা এত্তবড় মেমরি সেল থেকে তথ্য এনে কাজে লাগানো অনেক কমপ্লিক্যাটেড বা প্যারাদায়ক একটা ব্যাপার। তাই, যখন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বানানো হয়, তখন একে একটি ট্রেইনিং সেট, বা শেখানোর জন্য একটা পার্ট দেয়া হয়। যেমন একটা ছোট বাচ্চা যখন কথা বলতে শিখে, এইটা কে? আব্বু, এইটা কে? আম্মু। এইটা কি? নাকের ফুটো। ঠিক একই ভাবে, ট্রেইনিং সেট নামে একটা ফাংশনের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে শেখানো হয়।
এরপর কয়েক বছর পরেও যখন জিজ্ঞেস করা হবে, এআই মামা, তুমাকে ত এ জীবনে কয়েক লক্ষ-কোটি ট্রেইনিং দেয়া হইছে। মিলিয়ন বিলিয়ন প্রশ্ন ও উত্তর শেখানো হইছে। একই প্রশ্ন ১০০ ভাবে ঘুরিয়ে শেখানো হইছে।
ত এখন বল ত, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে?
উত্তর কি আসবে? তিতলির মত এআই ও কি পারবে? পারবে কি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিতে?
হ্যা আসবে, এবং অবশ্যই পারবে।
আর ঠিক এভাবেই কাজ করে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এপ্লিকেশনসমূহ
▣ এ আইইয়ের এপ্লিকেশন আসলে গণনাযোগ্য না, আসলে গুনেই শেষ করা যাবেনা, লিখবো কি? এ আই মামাকে বিশ্বের সমস্ত যায়গায় ইউজ করা হচ্ছে, প্রতিটা সেকটর, ইন্ডাস্ট্রি, বাদ যায়নি কিছুই। স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন ঔষধপত্র, শরীরের বডি পার্টস, থেকে শুরু করে নাক, কান, গলা, চোখ, সবকিছুতেই এ আই-কে ইউজ করা হচ্ছে। এমনকি অপারেশন রুমের মেশিন থেকে শুরু করে, সার্জারির মত সূক্ষ কাজেও এ আই কে ব্যবহার করা হচ্ছে।
▣ যারা কম্পিটারে দাবা খেলে, সে দাবা গেমটি বানানোর জন্যও একটি কৃত্রিম ব্রেইনের দরকার পড়ে। যা এ আই ছাড়া সম্ভব নয়। কিছু অটোমেটেড গাড়ি মার্কেটে দেখতে পাওয়া যায়, অনেকের হয়তো আছে ও, গাড়িকে যখন ম্যাপ দেখিয়ে, সেলফ ড্রাইভিং মোডে রাখা হয়, তখন, গাড়িটি কোন রকম ঝামেলা ছাড়া, সমস্ত ট্রাফিক, মানুষ, আকাবাকা বা মেঠোপথ ধরে খুব চমৎকার ভাবে আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছিয়ে দেয়। এটি সম্ভব হয়েছে এ আই ইঞ্জিনের ফলে।
তাছাড়া ব্যাংকিং বা লেনদেনের সময়, এত নিখুত ট্রানজেকশন, এ আই ছাড়া চিন্তা করাও অসম্ভব। আসলে এসব সেকটর আর এপ্লিক্যাশনের অভাব নেই। প্রতি নিয়ত এগুলো বাড়ছে।
৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধাপসমূহ
এ আই কে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে,
✔ weak বা দূর্বল এ আই, যেগুলো আদেশ বা কমান্ডের উপর কাজ করে, যেমন, গুগলের হোম, এমাজনের এলেক্সা, বা এপলের শিরি, কিছু গেমস, যেমন দাবা, বা পোকার
✔ Strong বা শক্তিশালী এ আই, এরা দায়িত্ব মেনে কাজ করে, অনেক জটিল বা তথ্য উপাত্ত, বা সিচুয়েশন দেখে, সমস্যা সমাধান করে। যেমনঃ সেলফ ড্রাইভিং
৫. গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট
এতক্ষন যাবত, উপরের লাইনগুলো পড়ে এসে, এখন কি মনে হচ্ছে, আরে ব্যাস। এ আই ত একটা জিনিস রে!
☞ এ আই আসলেও একটা জিনিস। তবে এটা এ আই নিয়ে যারা ইতিবাচক চিন্তা করে তাদের জন্য প্রযোজ্য। ভালো মন্দ, সাদা কালো নিয়েই আমাদের প্রকৃতি ও জীবন। তাই এত ভালোর মাঝেও কিছু মন্দের দেখা মিলতেই পারে।
☞ এ আই যখন সাধারন মানুষের সামনে আসা শুরু করে, মানুষ এর ভালো দিক গুলো নিয়ে সত্যিই খুব খুশি হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে কলকারখানা, ইন্ডাস্ট্রি, অফিস, শিক্ষা, মেডিক্যালের মত জায়গাগুলোতে মানুষের বদলে, এ আই কে কাজ দেয়া শুরু করা হলো, তখন হাজারো কোটি মানুষ চাকুরিচ্যূত হতে শুরু করলো, জীবন জীবিকায় এ আই কে বিশ্বাসের এক মাধ্যম করাতে মানুষের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে পড়লো। হ্যাকিং, স্প্যামিংয়ের মত প্রোগ্রাম গুলো, এআইয়ের দূর্বল জায়গাগুলো খুজে বের করে, খুব ভয়াবহ করে তুললো। আর এগুলো কোন অতীতকাল হিসেবেই রইলো না, বর্তমান ও ভবিষ্যতকেও নাড়া দিয়ে দিলো।
যদিও এ আই ব্যবহার করে, মানুষের জীবন আরো নিখুঁত আর রিক্স ফ্রি হয়ে উঠছে, সেলফ ড্রাইভিং ইউজ করে দূর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে। তবুও দিনশেষে একটা রিক্স থেকেই যায়, কম্পিউটার ভূল করেনা, তবে কম্পিউটার কে ভূল করা যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন