বাংলা বানানের নিয়ম Bangla Banan - Bangla Notes
বাংলা Banan বানানের নিয়ম
এইচএসসি (HSC) পরীক্ষার্থীদের বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক 'বাংলা বানানের নিয়ম' এর উপর বিগত বছরে আসা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা ব্যাকরণের অন্যান্য টপিক সম্পর্কে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে আমাদের দেওয়া নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
প্রশ্নঃ ণ-ত্ব বিধান কী? ণ-ত্ব বিধানের ৫ টি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী বাংলা ভাষায় দন্ত্য-ন এর স্থানে মূর্ধণ্য-ণ হওয়ার সে বিধান তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে।
যেমনঃ কর্ণ, স্বর্ণ, তৃণ ইত্যাদি।
নিম্নে ণ-ত্ব বিধানের ৫ টি নিয়ম উদাহরণসহ দেওয়া হলো -
১। তৎসম শব্দে ঋ, র-ফলা, রেফ, র-এর পরে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে মূর্ধণ্য-ণ বসে।
যেমনঃ
ঋ: ঋণ, তৃণ, ঘৃণা, মসৃণ।
র-ফলা: প্রণাম, প্রণয়, প্রণতি, প্রাণ, মিশ্রণ, যন্ত্রণা।
রেফ: নির্ণয়, নির্ণীত, পূর্ণিমা।
র: রণ, অরণ্য, মরণ।
২। তৎসম শব্দে ষ এবং ক্ষ এর পরে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে মূর্ধণ্য-ণ বসে।
যেমনঃ
ষ: বিষন্ন, অন্বেষণ, ভীষণ, পাষাণ।
ক্ষ: ক্ষণ, লক্ষণ, পরীক্ষণ, সমীকরণ।
৩। ট-বর্গীয় ধ্বনির (ট, ঠ, ড, ঢ) ন-সহযোগে যুক্তব্যাঞ্জণ হলে ণ-ত্ব বিধান অনুসারে তা মূর্ধণ্য-ণ হয়।
যেমনঃ
ট: ঘন্টা, ঘন্ট, বন্টন, হন্টন।
ড: প্রচন্ড, ভন্ড, দন্ড, মন্ড।
৪। ত-বর্গীয় ধ্বনি (ত, থ, দ, ধ) ন- সহযোগে যুক্তব্যাঞ্জন হলে সেই ন সর্বদা দন্ত-ন হয়।
যেমনঃ
ত: দন্ড, প্রান্ত, মন্তর, অন্তর।
থ: পন্থা, পান্থ, মন্থর, সুপান্থ।
দ: বন্দি, বন্দনা, বন্দুক, নন্দন।
ধ: বন্ধু, বন্ধন, বন্ধ, সন্ধ্যা।
৫। প্র, পরি, নির এই তিনটি উপসর্গের পর ণ-ত্ব বিধি অনুসারে সর্বদা মূর্ধণ্য-ণ বসে।
যেমনঃ
প্র: প্রণাম, প্রণয়, প্রণতি, প্রণিধান।
পরি: পরিমাণ, পরিণাম, পরিণতি, পরিণয়।
নির: নির্ণয়, নির্ণিত, নির্মাণ।
৬। তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, ইত্যাদি অতৎসম শব্দের বানানে ণ-ত্ব বিধি প্রযোজ্য নয়।
যেমনঃ
তদ্ভব: কানাই, গিন্নি।
দেশি: নরুন।
বিদেশি: টিফিন, রুটিন।
৭। ক্রিয়াবাচক শব্দের বানানে ণ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য নয়।
যেমনঃ করানো, দেখানো, শোনানো।
৮। কিছু কিছু শব্দের বানানো স্বভাবতই মূর্ধণ্য-ণ বসে, এগুলোকে নিত্য মূর্ধণ্য-ণ বলে।
যেমনঃ মণি, বেণু, বীণা, চাণক্য, লবণ।
প্রশ্নঃ ষ-ত্ব বিধান কী? ষ-ত্ব বিধানের ৫ টি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ
সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ামানুযায়ী বাংলা ভাষায় দন্ড-স এর স্থানে মূর্ধণ্য-ষ হওয়ার বিধানকে ষ-ত্ব বিধান বলে।
ষ-ত্ব বিধানের ৫ টি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
১। ঋ, ঋ-কার (<) এবং রেফ এর পরে সর্বদা ষ বিধান প্রযোজ্য। যেমনঃ
ঋ: ঋষি,ঋষক।
ঋ-কার: কৃষক, কৃষ্ণ।
রেফ: হর্ষ, বর্ষণ।
২। ই, উ-কারান্ত উপসর্গের পর কিছু ধাতুর দন্ত্য-স
পরিবর্তিত হয়ে ষ-ত্ব বিধি অনুসারে মূর্ধণ্য-ষ হয়।যেমনঃ বিষাদ, নিষিদ্ধ, অভিষিক্ত।
৩। সন্ধিতে ই/উ-কারান্ত নিসর্গের পর ক, খ, প, ফ এর যেকোন একটি বর্ণ থাকলে সন্ধিবদ্ধ শব্দে বিসর্গের পরিবর্তে মূর্ধণ-ষ বসে। যেমনঃ
পরিঃ + কার = পরিষ্কার।
নিঃ + প্রাণ = নিষ্প্রাণ।
নিঃ + ফল = নিষ্ফল।
আবিঃ + কার = আআবিষ্কার।
৪। পুরুষবাচক সম্ভাষণসূচক শব্দে এ-কারের পর মূর্ধণ্য-ষ বসে। যেমনঃ বন্ধুবরেষু, প্রিয়তমেষু, কল্যাণীয়েষু।
৫। যুক্তব্যাঞ্জন গঠনের ক্ষেত্রে ট-ঠ এর পূর্ববর্তী শিস-ধ্বনি ( স, শ, ষ) হিসেবে কেবল মূর্ধণ্য-ষ বসে। যেমনঃ
ট: সৃষ্টি, রুষ্ট, ঘনিষ্ট।
ঠ: কাষ্ঠ, ষষ্ঠ, বলিষ্ঠ।
৬। বিদেশি শব্দের বানানে ষ-ত্ব বিধাণ প্রযোজ্য নয়। যেমনঃ সালাত, সিয়াম, ক্লাস।
৭। কিছু কিছু শব্দের বানানে স্বভাবতই মূর্ধণ্য-ষ হয়, এগুলোকে নিত্য মূর্ধণ্য-ষ বলে। যেমনঃ ঊষা, বিষ, বিশেষ্য, পুষ্প।
প্রশ্নঃ ৫টি তৎসম শব্দের বানানের নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
উত্তরঃ
নিম্নে ৫টি তৎসম শব্দের বানানের নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
১। রেফ এর পর ব্যাঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হয় না। যেমনঃ ধর্ম্ম, অর্জ্জন, কার্য্য যথাক্রমে ধর্ম, অর্জন, কার্য হবে।
২। শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমনঃ প্রথমত, বস্তুত, মুলত, প্রায়শ।
৩। সংস্কৃত ইন্ (ঈ) প্রত্যয়ান্ত শব্দের দীর্ঘ ঈ কারান্ত রূপ সমাসবদ্ধ হলে সংস্কৃত ব্যকরণের নিয়ম অনুযায়ী সেগুলোকে হ্রস্ব-ই কার হয়। যেমনঃ প্রাণী-প্রাণিবিদ্যা, গুণী-গুণিজন।
৪। সংস্কৃত ইন্ (ঈ) প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ত্ব/তা প্রত্যয় থাকলে হ্রস্ব-ই কার বসে।
যেমনঃ
স্থায়ী + ত্ব = স্থায়ীত্ব।
কৃতি + ত্ব = কৃতিত্ব।
দায়ী + ত্ব = দায়িত্ব।
৫। যে সকল সংস্কৃত শব্দের বানানে ই/ঈ বা উ/ঊ কার উভয়ই প্রযোজ্য সে সকল শব্দে কেবল ই/উ কার বসবে। যেমনঃ শ্রেণি, দাদি, চাচি, লহরি।
প্রশ্নঃ অতৎসম শব্দের ৫টি বানানের নিয়ম উদাহরণসহ লিখ।
উত্তরঃ
অতৎসম শব্দের ৫টি বানানের নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো -
১। সকল অতৎসম শব্দের দেশি, বিদেশি, তদ্ভব, মিশ্র বানানে সর্বদা ই/উ-কার হবে। যেমনঃ বেশি, হিন্দি,মামি।
২। বাংলায় এ কার ধ্বনি দিয়ে এ এবং আ উভয় ধ্বনিই নির্দেশিত হয়। যেমনঃ দেখা, গেল, এলো।
তদ্ভব ও দেশি শব্দে সাধারণত এ কার উচ্চারিত হলেও কিছু বিদেশি শব্দে উভয় ধ্বনিই উচ্চারিত হয়। যেমনঃ তেলাপোকা, আ্যাসিড, অ্যাপেল।
৩। বাংলা স্বরে অ-ধ্বনির উচ্চারণ বহু ক্ষেত্রে ও ধ্বনির মতো হয়। যেমনঃ পড়ানো, খায়ানো, ভালো।
৪। শব্দের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকভাবে অনুস্কার ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ রং, ঢং, সং। তবে অনুস্বারের সাথে স্বর যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে ঙ বসে। যেমনঃ রঙের, ঢঙের।
৫। তৎসম শব্দের বানানে ণ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য নয় বলে কখনো মূর্ধণ্য-ণ হবে না। যেমনঃ ইরান, পরান, রানি, হর্ন।
প্রশ্নঃ বাংলা একাডেমি প্রণিত প্রমিত বা আধুনিক বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ
বাংলা একাডেমি প্রণিত প্রমিত বা আধুনিক বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো -
১। তৎসম শব্দের বানান বাংলা ভাষায় অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থাকবে।
যেমনঃ সূর্য, নক্ষত্র, ঝর্ণা ইত্যাদি।
২। রেফ এর পরে ব্যঞ্জনবর্ণের দিত্ব হবে না।
যেমনঃ ধর্ম্ম, কার্য্য, কর্ম্ম যথাক্রমে ধর্ম, কার্য ও কর্ম হবে।
৩। শব্দের শেষে বিসর্গ বসবে না।
যেমনঃ পুনশ্চঃ, মূলতঃ, প্রথমতঃ যথাক্রমে পুনশ্চ, মূলত ও প্রথমত হবে।
৪। সন্ধির ক্ষেত্রে ক, খ, গ, ঘ পরে থাকলে পূর্বে অবস্থিত 'ম' এর স্থানে সন্ধিবদ্ধ শব্দে অনুস্বার হবে।
যেমনঃ
অহস+কার = অহংকার
সম্+গঠন = সংগঠন
৫। সংস্কৃত ইন্/ঈ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ত্ব/তা প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রত্যয়ান্ত শব্দে দীর্ঘ-ঈ কারের পরিবর্তে হ্রস্ব-ই-কার হবে।
যেমনঃ
স্থায়ী → স্থায়িত্ব
সহযোগী → সহযোগিতা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন